ঢাকা।। করোনা ভাইরাসের কারণে সারাবিশ্বেই কমে গেছে জ্বালানি তেলের চাহিদা। সেই সঙ্গে কমেছে তেলের দামও। ইতোমধ্যেই গত ১৮ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে অপরিশোধিত তেলের দাম। যুক্তরাষ্টে তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ২০ ডলারের নিচে নেমে গেছে। সোমবার লেনদেনের একপর্যায়ে ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম দাঁড়ায় ২২ দশমিক ৫৮ মার্কিন ডলার প্রতি ব্যারেল। ২০০২ সালের নভেম্বরের পর থেকে এত বড় দরপতন আর দেখা যায়নি।
দাম কমেছে মার্স ইউএস, ওপেক বাসকেট, ইউরালসসহ সবধরনের অপরিশোধিত তেলের। করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্বব্যাপী লকডাউন আরও স্থায়ী হলে তেলের দাম আরও কমে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইউএস টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডাব্লুটিআই) মার্কিন সূচকে তেলের দাম ৬ শতাংশ কমেছে।
এর আগে ২০০২ সালে তেলের দাম ৬ শতাংশ কমে গিয়েছিল। তখন ব্যারেল প্রতি তেলের দাম ছিল ২২ দশমিক ৭৬ ডলার। বিশ্লেষকরা বলছেন, তেলের দাম এখন এতটাই কমে গেছে যে, এটি অনেক তেল সংস্থার পক্ষে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
এছাড়া যারা তেল উৎপাদনের পেছনে অনেক টাকা ব্যয় করছেন তাদের কাছে উৎপাদন বন্ধের বিকল্প নেই। কারণ চাহিদা না থাকায় তাদের বেশিরভাগের স্টোরেজেই তেল জমা আছে।
গোটা বিশ্বে তেলের চাহিদা এখন প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ মিলিয়ন ব্যারেল কমে যাচ্ছে, যা গত বছরের তুলনায় ২০ শতাংশ কম। বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামীতে কেবলমাত্র পেট্রোলিয়াম রফতানিকারক দেশগুলির বাইরেও তেলের উৎপাদন কমানোর প্রয়োজন হবে।
গত একমাসে তেলের দাম কমেছে অর্ধেকেরও বেশি। এর জন্য দায়ী করা হচ্ছে বিশ্বব্যাপী চাহিদা কমে যাওয়াকে। করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে বেশিরভাগ দেশই যানবাহন চলাচলে কড়াকড়ি আরোপ করেছে। ফলে সবখানেই জ্বালানি তেলের চাহিদা কমে গেছে ব্যাপকভাবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, করোনভাইরাস মহামারী ছাড়াও তেল বাজার নিয়ে সৌদি আরব-রাশিয়া দ্বন্দ্বের কারণে বিশ্ববাজারে তেলের দামের ওপর প্রভাব পড়েছে।
মূল্যহ্রাসের পেছনে রয়েছে সৌদি আরব-রাশিয়ার মধ্যে চলমান মূল্যযুদ্ধের প্রভাবও। এ মাসের শুরুর দিকে তেলের উৎপাদন কমানোর বিষয়ে সৌদি নেতৃত্বাধীন ওপেকভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে মতবিরোধ দেখা দেয় বিশ্বের অন্যতম তেল উৎপাদক রাশিয়ার। ফলে তেলের দাম অনেক কমিয়ে দেয় সৌদি আরব।
ন্যাশনাল অস্ট্রেলিয়া ব্যাংকের পণ্য গবেষণা বিষয়ক প্রধান লচলান শাও বলেছেন, তেলের বাজার নিয়ে ওপেক, সৌদি আরব এবং রাশিয়া তাদের আচরণগুলো সংশোধন করতে পারে। তবে ওপেক তেমন কিছু করতে পারবে না। তার মতে, কোভিড-১৯ এর ধাক্কা বেশ বড় আকারেই দেখা দেবে বিশ্ববাজারে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক ব্যাংক মরগান স্ট্যানলের বিশ্লেষক ডেভিন ম্যাকডারমট বলেন, ক্রমবর্ধমান লকডাউনের সঙ্গে তেলের দাম তাল মেলাতে ব্যর্থ হয়েছে। এতে বিশ্বব্যাপী চাহিদা ২০ শতাংশ কমে যেতে পারে।
এদিকে, করোনাভাইরাস মহামারির ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল। সম্প্রতি দাতাসংস্থাটির প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বলেন, আমরা মন্দার যুগে প্রবেশ করেছি। ২০০৯ সালে বিশ্বজুড়ে যে মন্দা দেখা দিয়েছিল, এবারের অবস্থা তার চেয়েও কঠিন হবে।- বৈশাখী টিভি